মেজবান ঐতিহ্য নাকি রেসিপি!
মেজবান মানেই চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম মানেই মেজবান! মেজবান শব্দটা আসলে ফার্সি। আঞ্চলিক ভাষায় মেজ্জান বলা হয়। সুদীর্ঘকাল থেকে চাটগাঁইয়া মেজ্জানের রয়েছে আলাদা কদর, রূপ-বৈচিত্র্য ও বহুল জনপ্রিয়তা। বিশেষ কোনো উপলক্ষে মেজবানির আয়োজন করা হয়। তবে চট্টগ্রামের পাশ্ববর্তী অঞ্চলে মেজবান জেয়াফত নামে পরিচিত। বৃহত্তর চট্টগ্রামে এ মেজবানের আয়োজন করা হয়।মেজবান হচ্ছে অতিথি আপ্যায়নকারী, আতিথেয়তা বা গণভোজের আয়োজন। চট্টগ্রাম অঞ্চলের কয়েকজন ইতিহাসবিদের মতে, মেহমান শব্দের অর্থ অতিথি। আর অতিথিকে যিনি আতিথেয়তা দান করেন, সেটাকে মেজবান বলা হয়। কিন্তু প্রায় শতবর্ষের পরিক্রমায় মেজবান শব্দটার অর্থে পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে মেজবান মানে হচ্ছে, বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আপ্যায়নের ব্যবস্থা। অর্থাত্ সামর্থ্য যা-ই থাকুক না কেন, ধনী-গরীব যে-ই মেজবানের আয়োজন করবে তার অতিথির সংখ্যা নিরূপণ করা চলবে না। অর্থাত্ অতিথির সংখ্যা গুনে মেজবানের আয়োজন সম্ভব নয়। যত অতিথি আসবে এবং যে পরিমাণ খেতে চাইবে ততটুকু পরিবেশন করাই হলো পরিপূর্ণ মেজবানের মিথ।বিশেষ করে প্রিয়জনের মৃত্যু, মৃত্যুবার্ষিকী, জন্ম, নবজাতকের নাম রাখা, জন্ম বার্ষিকী, বিয়ে, আকিকা, সুন্নতে খৎনা, কান ছেদন, ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু উপলক্ষে মেজবানির আয়োজন করা হয়। এতে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও বিশিষ্টজনদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। পরিবার-পরিজন সামর্থ্য অনুযায়ী মেজবানের আয়োজন করে থাকে। মেজবান সর্বজনীন। সবথেকে সুন্দর দিক হচ্ছে এখানে ধনী-গরিব একসাথে বসে মেজবানি খায়।এককালে বাড়ির উঠোনের আয়োজন এখন চলে এসেছে পাড়াতো কমিউনিটি সেন্টারে। কিন্তু মেজবানের খাবার তালিকায় খুব পরিবর্তন আসেনি। সাদা ভাতের সঙ্গে তিন বা চার ধরণের তরকারি পরিবেশিত হয় যেমন গরুর মাংস, নলা কাঁজি ও কলই বা বুটের ডাল। এর রন্ধন প্রণালী বৈশিষ্টপূর্ণ, যেমন- মরিচ ও মসলা সহযোগে রান্না করা ঝাল গোসত; গরুর নলা দিয়ে কম ঝাল, মসলাটক সহযোগে রান্না করা শুরুয়া বা কাঁজি, যা নলা কাঁজি নামে পরিচিত; মাসকলাই ভেজে খোসা ছাড়িয়ে ঢেঁকিতে বা মেশিনে গুড়ো করে এক ধরনের ডাল রান্না করা হয়। এটাকে ঘুনা ডাল বলে; কলইর ডালের পরিবর্তে বুটের ডালের সাথে হাঁড়, চর্বি ও মাংস দিয়ে হালকা ঝালযুক্ত খাবার তৈরি করা হয়। মেজবানের রান্নার রয়েছে আলাদা বিশেষত্ব। মূল পদ গরুর মাংস হলেও এই মাংস রান্নার ধরন আলাদা। মসলাও ভিন্ন। শুধু তা-ই নয়, রান্নার ডেকচি থেকে শুরু করে চুলা পর্যন্ত আলাদা। এই কাজে দক্ষ চট্টগ্রামের বাবুর্চিরা। বংশপরম্পরায় তাঁরা এই ঐতিহ্যের ধারা অব্যাহত রেখেছেন। তবে চট্টগ্রামে কবে থেকে মেজবানের প্রচলন শুরু হয়েছে, তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। গরুর মাংসের জন্য আদিকাল থেকেই চট্টগ্রাম প্রসিদ্ধ। এখানকার লাল গরু (রেড ক্যাটল অব চিটাগাং) সবচেয়ে উন্নত দেশী গরুর জাত। মূলত চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, বাঁশখালী, আনোয়ারা, চন্দনাইশসহ সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলে এ গরু উত্পাদন হয় বেশি। দেখতে সুন্দর এ গরু আকারে ছোট হলেও মাংস সুস্বাদু, পুষ্টিকর। মেজবানে মূলত লাল গরুর ব্যবহারই সবচেয়ে বেশি।
প্রিয় পাঠক, আপনিও হয়ে উঠুন অবসর সময়ের অনলাইন সাংবাদিক। আপনার লেখালেখির প্রতিভা কে অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে হয়ে উঠতে পারেন রকমারি নিউজ এর অনলাইন সাংবাদিক। লাইফ স্টাইল , ব্যবসা , উদ্যোগ , সচেতনতা, ফ্যাশন, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ অভিজ্ঞতা , নারী, ক্যারিয়ার, পরামর্শ, এখন আমি কী করব, খাবার, রূপচর্চা ও ঘরোয়া টিপস, লেখাপড়া , গুজব কোন সংবাদ, তাৎক্ষণিক কোন ঘটনা বা অভিজ্ঞতা ইত্যাদি যে কোন বিষয় নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবি ও ভিডিও সহ (যদি থাকে) ইমেইল করুন এই ঠিকানায় - info@rokomari.news। লেখাটি আপনার নামে প্রকাশ করা হবে। আপনার সেই লেখার লিংক সহজেই সবাইকে শেয়ার করে দিতে পারবেন। এছাড়া, ইমেইল না করেও আপনি খুব সহজে রকমারি অনলাইন পোর্টালে লেখা সাবমিট করে দিতে পারবেন । আপনার প্রতিটি লেখা আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । অনলাইন পোর্টাল এ লেখা সাবমিট করতে এখানে Click করুন Submit News
Comment / Reply From
You May Also Like
Popular Posts
Newsletter
Subscribe to our mailing list to get the new updates!